Result52

অভিজ্ঞতা বর্ণনা : একটি ভয়ংকর রাত

একটি ভয়ংকর রাত

একটি ভয়ংকর রাত

সেকেন্ড ইয়ারের পরীক্ষা শেষ করেছি মাত্র । লুবসা বায়না ধরল নানাবাড়িতে যাবে । কী করি? আম্মাও বলল 'যা বোনকে সাথে নিয়ে একটু ঘুরে আয় ।' যাক মনটাও চাইল নানাবাড়িতে যেতে । দুদিন পরেই নানাবাড়িতে চলে আসলাম । কয়েকদিন ধরে পরীক্ষা; তাই বের হতে পারিনি । এখানে এসে মনে হলো মুক্ত বিহঙ্গের মতো ঘুরে বেড়াব সারা রাত-দিন ।

পড়ন্ত বিকেলেই বেরিয়ে পড়লাম । ‘লক্ষ্মীপুর হাইস্কুল' এ এলাকার একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান । অনেক আগ থেকে এ স্কুলের বিশাল মাঠে যাত্রা, সার্কাস প্রভৃতির আয়োজন হতো। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উদ্যোগে এ ধরনের অনুষ্ঠানাদি প্রায় প্রতিবছরই হয়ে থাকে । বাজারের পাশে স্কুলটি । জানতে পারলাম যাত্রা নয় বরং এখানে কবিগানের আসর বসবে । আরও জানলাম মানিকগঞ্জ থেকে দুজন বয়াতি এসেছেন । মূলত শরিয়ত, তরিকত, হকিকত আর মারফতের বিষয় নিয়ে এ আয়োজন হবে । আমার অবশ্য এ বিষয়ে তেমন কোনো আগ্রহ নেই । তবুও যখন দেখলাম অনেক বয়োবৃদ্ধ মানুষ এসে ইতোমধ্যেই সেখানে উপস্থিত হয়েছে তখন একটু কৌতূহল জাগল আচ্ছা অন্তত কিছুক্ষণ দেখি কেমন লাগে? কিন্তু না এ এক বড়ো আয়োজন । কিছুক্ষণ পরেই কবি বা বয়াতিরা মঞ্চে উঠলেন; তারা দুটো দলে বিভক্ত হয়ে দুদিকে বসলেন । যাহোক মূল পর্ব শুরু হয়ে গেল । কিন্তু আমার কিছুতেই যেন মন বসছিল না । অথচ ঘনঘোর অন্ধকার । কীভাবে ফিরে যাব? বশির বাড়িতে থাকলে হয়তো এ ধরনের অসুবিধায় পড়তাম না । বড়ো মামা বলল ও আজ সকালে কলেজ হোস্টেলে চলে গেছে । কিন্তু কী করি, এখান থেকে প্রায় ৩ কি.মি. দূরে রাজিবপুর । নানাবাড়ির আশপাশের কোনো মানুষকেও দেখছি না । কাউকে বলতেও পারছি না কীভাবে এত রাতে যাব । লজ্জা, ভয়- দুটোই যেন আমাকে পেয়ে বসল । বড়ো মামা হয়তো জানেন না । অগত্যা আল্লাহ ভরসা করে সে অন্ধকার রাতে যখন পা বাড়ালাম; প্রথমেই শরীর শিউরে উঠল I তারপরেও আরও কিছুদূর এগিয়ে সবচেয়ে যে বিষয়টি আমাকে দুর্বল করল তা হচ্ছে— একটি বড়ো শিমুল গাছ । এটির আশপাশে তেমন কোনো বাড়ি নেই । সামনে-পেছনে আশায় থাকলাম যদি কাউকে সঙ্গী হিসেবে পাই । না ‘অভাগা যেদিকে চায় সাগর শুকিয়ে যায়' । কোথাও কাউকেও দেখতে পেলাম না । নানাবাড়িতে অনেক গল্প শুনেছি যে, এ শিমুল গাছের উপর এক সুন্দরী চুল ছাড়িয়ে বসে থাকে; অথচ কাছে গেলেই এত বিদঘুটে অন্ধকার কিছুই যেন দেখতে পায় না । আবার শুনেছি এক দৈত্য এই শিমুল গাছে বসে থাকে অথচ তার পা মাটি পর্যন্ত; এরপরেও কেউ যদি এ পাশ দিয়ে যায়— তার প্রচণ্ড জ্বর হয় এবং শেষ পর্যন্ত মারাও যায় । খুবই চেষ্টা করছি এসব গল্পের কথা মনে আনব না; অথচ ভয়ে এগুলো আরও যেন তীব্রভাবে মনের মধ্যে তোলপাড় করছে । দেখতে দেখতে প্রায় শিমুল গাছের কাছাকাছি এসে পড়লাম । হঠাৎ যেন মনে একটু সাহস জাগল যে এগুলো আজগুবি কথা— আমি এগিয়েই যাব । সত্যি কথা বলতে কী শিমুল গাছটি নির্বিঘ্নে পার হলাম । কিন্তু আরও কিছু দূর যাবার পর দেখলাম ফাঁকা মাঠের মধ্যে একজন লোক দাঁড়িয়ে । প্রথমে ভাবলাম হয়তো গ্রামে অভ্যাসবশত বাইরে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতেই কেউ এসেছে। একটু সাহসও পেলাম । না তা নয়তো; লোকটির মোটেই কোনো ধরনের সাড়া নেই । আমার শরীর বেয়ে ঘাম ছুটলো, মনে মনে সকল দোয়া- দরুদ পড়তে লাগলাম । পা দুটো থরথর করে কাঁপতে লাগল । হায়! এ বিপদে কী করি? হঠাৎ কে যেন বলল— সবুজ! আমার জানে পানি আসল । পেছনে ফিরে দেখি বড়ো মামা । মামা বলল, ‘তোকে খুঁজতেই তো এসেছি। ভয় পেয়েছিস নাকি?' আমার মুখ থেকে যেন কথা বের হচ্ছিল না ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Result52
Result52
Result52
Result52