Result52

সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ ও বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি ভাষণ তৈরি কর

'সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ ও বাংলাদেশ' সম্পর্কে একটি ভাষণ তৈরি কর।

'সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ ও বাংলাদেশ' সম্পর্কে একটি ভাষণ তৈরি কর ।

সম্মানিত সভাপতি, বিজ্ঞ আলোচকবৃন্দ ও সুধীমণ্ডলী— এই পড়ন্ত বিকেলে আপনাদের প্রতি রইল আমার প্রাণঢালা ভালোবাসা । সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা এই বাংলাদেশ । এর সমৃদ্ধি-ঐতিহ্য লোকমুখে কিংবদন্তি ছড়াত— 'গোয়াল ভরা গরু আর পুকুর ভরা মাছ' অন্যদিকে অনেকে এদেশের মানুষকে লক্ষ করে বলত- 'গোলাভরা ধান আর গলায় গলায় গান' । এই তো আবহমান কালের বাংলাদেশ। অথচ সন্ত্রাসের কালিমা আমাদের সমস্ত অর্জনকে ম্লান করে দেয়, জাতি হিসেবে হীন করে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিষবাষ্প ছড়ায় । সুতরাং এই জঘন্য অপবাদ থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতেই হবে।

সুপ্রিয় সুধী
আজকের এই আলোচনা নানাবিধ কারণে গুরুত্ব বহন করে । বিশেষত বাংলাদেশে সন্ত্রাস এখন আর লুক্কায়িত কোনো বিষয় নয় । বরং জাতির সমস্ত উন্নয়ন ও অগ্রগতির অন্যতম অন্তরায় হিসেবে গণ্য হচ্ছে ।

সম্মানিত সুধীমণ্ডলী
আজ আমাদের ঘুম ভাঙে পাখির কলকাকলিতে নয়, গুলির শব্দে । দিনের শুরু হয় চায়ের কাপে চুমুকে আর খবরের কাগজে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সংবাদ দিয়ে । উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলা, রমনার বটমূলে বোমা, একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা- আমরা এগুলো শুধু রাজনীতিক বিচারে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই উড়িয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু যখন বাংলা ভাইয়ের জন্ম হয়, তথাকথিত ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন চালায়, কখনও কখনও হাত-পায়ের রগ কাটে, কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন খুনের মহড়া চলে, অগণিত শিশু-কিশোরী আর নারী ধর্ষিত হয় এবং নিহত হয়; ব্রিটিশ কূটনীতিকের ওপর চলে বোমা হামলা, একযোগে ৬৩টি জেলায় একই সঙ্গে বোমা বিস্ফোরণ, মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ-অবশেষে হত্যা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হত্যা, এমপি-মন্ত্রী হত্যা, নারায়ণগঞ্জে সাত খুন, মুক্তমনা বুদ্ধিজীবী খুন, ব্লগার খুন, বিচারক খুন, অতর্কিত জঙ্গি হামলা, পেট্রোল বোমায় দগ্ধ অগণিত নারী ও শিশু – এসবই আমাদের সন্ত্রাসের সামান্য পরিসংখ্যান মাত্র । এছাড়াও নীরবে-নিভৃতে সন্ত্রাসের রাজত্ব আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রকে কতটা পঙ্গু করছে তা সহজেই অনুমেয় ।

প্রিয় সুধীমণ্ডলী
বিশ্বে বাংলাদেশের সন্ত্রাস এখন একটি আলোচিত বিষয় । সম্প্রতি উদ্বেগজনকভাবে ব্লগার হত্যা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পাল্টে দিতে চাচ্ছে । আমরা পত্র-পত্রিকায় এ হত্যার পিছনে কখনও আইএস, আলকায়দা, জেএমবি, হুজি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হিজবুত তাহরির কিংবা অন্য কোনো জঙ্গী সংগঠনের নাম পাই । এ থেকে অনুমিত হচ্ছে হয়ত আন্তর্জাতিক কোনো জঙ্গী সংগঠন এরূপ হত্যাকাণ্ডের পিছনে মদদ জোগাতে পারে। এছাড়াও বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানও সন্ত্রাসীদের জন্য নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হয় । এর দক্ষিণ-পূর্বে বিস্তীর্ণ সাগর এবং অতি সহজ-সরল মানুষের আতিথেয়তাও সন্ত্রাসীদের জন্য সহায়ক ।

সম্মানিত সুধী
একথা আর হয়তো নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসের মূলে রয়েছে রাজনীতিক দলের সীমাহীন বাড়াবাড়ি, মারামারি এবং খুনখারাবি । এখানে রাজনীতি চর্চার চেয়ে পেশিশক্তিই প্রাধান্য পায় । ফলে সংঘাত অনিবার্য । আবার রাজনীতিক নেতারা নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখার প্রয়োজনে অর্থ-বিত্ত দিয়ে যে গুন্ডাবাহিনী পোষে- তারাই মাঝে মধ্যে রক্তের হোলিখেলায় মেতে ওঠে । অন্যদিকে, কর্মসংস্থানের অপ্রতুলতা এবং আর্থনীতিক ব্যাপক বৈষম্য সমাজে নতুন করে সন্ত্রাসের জন্ম দেয় । জনসংখ্যার মাত্রাতিরিক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার যখন ব্যর্থ, তখন সেখানে নতুন করে সন্ত্রাসীর জন্ম নেওয়া তো স্বাভাবিক ।

প্রিয় সুধী
আমাদের অমিত তেজদীপ্ত যুবসমাজের অধিকাংশই তথাকথিত অপরাজানীতির শিকার হয়ে মাস্তান, চোরাকারবারি, মাদক পাচারকারীসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ।

সম্মানিত সুধী
অধিকাংশ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পেছনে আমাদের কিছু অসৎ সরকারি কর্মকর্তার হাত রয়েছে, যারা সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে মাসোহারা পেয়ে থাকে । এছাড়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত আইনের প্রয়োগ এখনও নিশ্চিত হয়নি; বরং পুলিশের চার্জশিট লেখায় দুর্বলতা, ঘুষের কারবার, বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা, ক্ষেত্রবিশেষে বিচারহীনতার সংস্কৃতি সন্ত্রাসীকে এ হীনকাজে উদ্বুদ্ধ করে ।

প্রিয় সুধী
সন্ত্রাসী নির্মূ ণর উদ্দেশ্যে র‍্যাব কর্তৃক ক্রসফায়ার— যা সুশীল সমাজ কখনোই গ্রহণ করতে পারছে না বরং এ ধরনের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড প্রকারান্তরে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের অপর নাম ।

উপস্থিত সুধী
সন্ত্রাসের এই রাহুগ্রাস থেকে আমাদের বাঁচতে হবে । বাঙালি শান্তিপ্রিয় জাতি; অথচ সন্ত্রাস যেভাবে অক্টোপাসের মতো ঘিরে রেখেছে— সেখানে থেকে বের হতেই হবে । এজন্য আমাদের প্রথমত একটি রাজনীতিক ঐকমত্য দরকার; সামাজিক সচেতনতা দরকার । আমাদের পাঠ্যসূচিতে সন্ত্রাসের কারণ ও প্রতিকার বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার । সন্ত্রাসীদের শাস্তি কিংবা দণ্ড দিয়ে নয় বরং তাদের সংশোধনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে ।

সম্মানিত সুধীমণ্ডলী
বাঙালি বীরের জাতি— সন্ত্রাসী নয় । বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতিতে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তির পতাকা উত্তোলিত হয়েছে আজও হবে ।

প্রিয় সুধী
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্রের উদ্ধৃতি দিয়ে শেষ করতে চাই— ‘পাপকে ঘৃণা কর পাপীকে নয়।' সন্ত্রাসীরা অন্য কেউ নয় বরং আমাদের বাংলা মায়ের সন্তান । আসুন তাদের সংশোধন করে সোনার বাংলা গড়ি। আপনাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে এখানেই শেষ করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Result52
Result52
Result52
Result52